ফল ও ফল গাছের রোগ দমন

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বা শরীরবৃত্তীয় কার্যক্রম ব্যাহত হওয়াকে উদ্ভিদের রোগ বলে । উদ্ভিদের শ্বসন, শোষণ, প্রশ্বেদন ও সালাকে সংশেষণ প্রক্রিয়া কোন কারণে বিঘ্নিত হলে উদ্ভিদ দেহে অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পায় । এ অস্বাভাবিকতাকে উদ্ভিদের রোগ বলে । খাদ্য প্রাণে ভরপুর ফল অতিগুরুত্বপূর্ণ ফসল । শারিরিক সুস্থতা ও সুঠাম দেহ রক্ষায় ফলের ভুমিকা অপরিসীম । রোগ ফলের সে গুণাগুণ নষ্ট করে । অতএব ফলের ও ফল গাছের রোগের ধরন, তার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন ।

ফল ও ফল গাছে নানা প্রকার রোগ হতে পারে । গাছে রোগ হলে তার নানা প্রকার লক্ষণ প্রকাশ পায় । গাছে বা ফলে আক্রমণের লক্ষণ বিভিন্ন রকম হয় । এই লক্ষণ গাছের শেকড়, কাণ্ড, পাতা ও ফলসহ বিভিন্ন অংশে হতে পারে । গাছে বা ফলে এই অসুস্থতার লক্ষণ দেখামাত্র উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । তাই রোগ হওয়ার মত বা ছড়ানো উপযোগী আবহাওয়া দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন । গাছে রোগ হওয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে অনেক রোগ থেকে গাছ ও ফলকে রক্ষা করা যায় । এমনকি রোগের বিস্তার রোধ করা যায় ।

কার্যকারণের দিকে দৃষ্টি রেখে, বিজ্ঞানী ফল ও ফল গাছের রোগ ব্যধিসমূহকে পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন । যথা- ১ । ছত্রাকজনিত রোগ, ২। ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ ৩ । ভাইরাস জনিত রোগ ৪ । নেমাটোড জনিত রোগ এবং ৫ পুষ্টি উপাদানের অভাব জনিত রোগ । সবচেয়ে অধিক সংখ্যক রোগ হচ্ছে ছত্রাক জনিত, মোট রোগসমূহের প্রায় ৫০ ভাগের অধিক হবে । অপরপক্ষে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ঘটতি রোগের সংখ্যা ৩০-৩৫ ভাগ হতে পারে । নেমাটোড দ্বারা আক্রান্ত রোগের সংখ্যা অন্যান্যদের তুলনায় কম ।

বাংলাদেশের ফল ও ফল গাছের প্রধান প্রধান রোগের তালিকা

ফল ও ফল গাছের রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার

বৈজ্ঞানিক কৃষির বিকাশ ও উদ্ভিদ রোগের বিকাশ ফসল চাষাবাদের শুরু থেকে সমান্তরালভাবে চলছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে খাদ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য কৃষি বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ শুরু করে। যেমন- 

১। নতুন জাতের আবাদী ফসল / গাছ 

২। অধিক ফলনশীল ফসলের জাত 

৩। উন্নত ও আধুনিক সারের উদ্ভাবন ও ব্যবহার 

৪ । অঢেল সেচের পানি এবং 

৫। পতিত না রেখে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার

কিন্তু রোগ ব্যাধির প্রতি বিশেষ নজর না রেখে এসব প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন মাধ্যমে রোগ বালাই বিস্তার লাভ করে । যেমন- 

১। বীজ ও অন্যান্য অঙ্গজ বংশবৃদ্ধির উপকরণের সাথে শক্তিশালী রোগজীবাণুর আবির্ভাব 

২। নতুন শস্য জাত চাষের ফলে পূর্বের রোগ জীবাণুর অধিকতর শক্তি সঞ্চয় 

৩। বিরাট এলাকা জুড়ে একই ফসল ও একই জাত চাষ, নিবিড় চাষ এবং সারা বছর ফসল দ্বারা মাঠ আচ্ছাদিত থাকায় রোগজীবাণু বেঁচে থাকার, বংশ বৃদ্ধি ও বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ পায় । 

৪ । সার ও পানি নির্বিচারে ব্যবহার রোগজীবাণু বিস্তারে সহায়ক । সুতরাং যে প্রযুক্তি বা কৌশল আমরা ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োগ করছি তা রোগ জীবাণু বৃদ্ধির জন্য অনুকূল । আধুনিক প্রযুক্তি রোগ জীবাণু সম্পর্কিত বিপদ বৃদ্ধির যেমন সহায়ক, তেমনি বৈজ্ঞানিক ভাবেই রোগজীবাণু নিয়ন্ত্রণও সম্ভব।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির মোকাবেলায় অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োজন । একইভাবে রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হলো-

১। মাঠে বা বাগানে যা রোপণ বা বপন করা হবে তা শস্য/গাছে পরিণত হবে। 

২। যা আবাদ করা হবে তা থেকে সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যাবে । 

৩। যা উৎপন্ন হবে তা নিরাপদে বাজারে আসবে এবং অবশেষে তাই গ্রাহকের নিকট পৌঁছাবে । উপরোক্ত তিনটি বাক্য হতে এটা বোঝায় যে, ফসল চাষাবাদের প্রত্যেকটি বা যে কোন ধাপে রোগ সৃষ্টি হয়। এ রোগ দমনের প্রয়োজন রয়েছে; উৎপাদনের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রেখে লক্ষ মাত্রায় পৌঁছার জন্য ।

উদ্ভিদ রোগ দমনের মূলনীতি (Principle of plant disease control)

একটি কার্যকরি উদ্ভিদ রোগ দমন কর্মসূচি প্রণয়নে নিম্নলিখিত মূল বিষয়গুলো মনে রাখা দরকার ।

১। শস্যের প্রকার ও লতা, গুল্ম গাছ, অর্থকরী ফসল, খাদ্য শস্য ইত্যাদি শস্যের বৃদ্ধির পর্যায়। 

২। রোগজীবাণুর প্রকৃতি ও ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি রোগ জীবাণুর জীবনচক্র, বীজ, মাটি বা বায়ু বাহিত, বিস্তারের ধরন ইত্যাদি । 

৩ । রোগের প্রকৃতি ও অভ্যন্তররীণ বাহ্যিক, বীজ, মুল, ফুল, পাতায় আক্রমন এ সকল বিষয় মনে রেখে উদ্ভিদ রোগ দমন কর্মসূচি নিম্নলিখিত ৪টি মূলনীতির ভিত্তিতে প্রণয়ন করা যায় । 

ক. রোগজীবাণু বর্জন (Exclusion of pathogen) 

খ. রোগ জীবাণু নির্মূল (Eradication of the pathogen) 

গ. রোগ জীবাণুর হাত থেকে ফসলকে বাঁচানো 

ঘ. রোগ প্রতিরোধী জাত উন্নয়ন (Resistant variety)

উপরোক্ত ৪(চার) মূলনীতির উপর ভিত্তি করে উদ্ভিদের রোগ দমনে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় । 

১ । আইন প্রয়োগের মাধ্যমে (Legislative measures ) 

২ । চাষাবাদ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (Cultural practices) 

৩ । রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার (Use of Chemicals) 

৪ । রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার (Use of resistant variety ) 

৫ । জৈবিক দমন (Biological control)

৬ । সমন্বিত রোগ দমন (IPM - Intergrated Pest Management) রোগ দমন ব্যবস্থা কোন সময় নেয়া হলে তার উপর ভিত্তি করে রোগ দমন পদ্ধতি দু'প্রকার

১। প্রোফাইলক্সিস: রোগ যাতে সৃষ্টি না হয় তার ব্যবস্থা নেয়াকে প্রিভেনটিভ ব্যবস্থা বলে । 

২। থেরাপি: রোগ শুরু হওয়ার পর রোগের বৃদ্ধি রহিত করার ব্যবস্থাকে কিউরেটিভ ব্যবস্থা বলে । 

সারণি ১ উদ্ভিদের রোগ দমন পদ্ধতিগুলো নিমে ছকে দেখানো হলো

উদ্ভিদ সংগনিরোধ (Plant Quarantine )

সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত একটি আইন যার মাধ্যমে কোন এলাকায় কোন নতুন বা অধিকতর শক্তিশালী রোগ জীবাণু প্রবেশে বাধা দেয়ার উদ্দেশে কৃষিজাত পণ্যের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয় । একে উদ্ভিদ সংগনিরোধ বলা হয় ।

১৬৬০ সালে কারবারী গাছ নিষিদ্ধ করে ফ্রান্স প্রথম উদ্ভিদ সংগনিরোধ আইন চালু করে । পরবর্তীতে ১৯১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল কোয়ারেন্টাইন আইন চালু হয় । বাংলাদেশে ১৯৬৬ সালে ক্ষতিকর বালাই আইন প্রণীত হয় যা ১৯৮৯ সালে সংশোধিত ও ১৯৯২ সালে বর্ধিত আকারে অনুমোদিত হয়ে চালু রয়েছে । কোয়ারেন্টাইল বা সংগনিরোধ ব্যবস্থাকে ২ ভাগে প্রয়োগ করা যায় ।

ক) Exclusive guarantine: এটা সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা ও নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে কার্যকরি করা হয় । যেমন— আলুর মড়ক রোগ দেখা দিলে কোন দেশ ইচ্ছে করলে সে বৎসর পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে আলু বীজ আমদানী বন্ধ রাখতে পারে। অথবা নির্দিষ্ট কোন দেশ থেকে আলু বীজ আমদানীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে ।

খ) নিয়ন্ত্রিত কোয়ারেন্টাইন: এটা কিছুটা শিথিল আইন । পরিদর্শন সনদপত্র প্রদান, বীজ পরিশাধন ও সনদপত্র প্রদান এবং সনদপত্র প্রদানের মাধ্যমে বীজ আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। উপরোক্ত আইন সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগের জন্য দরকার পোষক ও রোগজীবাণুর প্রাকৃতি ও রোগ বিভারের ধরনের উপর সম্যক জ্ঞান ।

কোয়ারেন্টাইন আইন কোন দেশের প্রবেশ পথে বিমান বন্দর, সামুদ্রিক বন্দর, স্থল বন্দর ইত্যাদি কার্যকরী করা যায় । ঐ সব পথে কোয়ারেন্টাইন বস্তু পরীক্ষা করা হয় । কোয়ারেন্টাইন বস্তু বলতে বোঝায়, চারা গাছ, গাছের পাতা, ফুল, ফল, কাণ্ড, মূল বা মূল সমষ্টি, বীজ সমষ্টি, বীজ, মাটি টবের গাছ ইত্যাদি যাদের মাধ্যমে অনাকাংখিত রোগজীবাণু বাহিত হতে পারে ।

প্রবেশ পথে রোগজীবানুকে তিনটি শ্রেণিতে বিবেচনা করে কোয়ারেন্টাইন বস্তু পরীক্ষা করা হয়। যথা-

শ্রেণি কঃ যে রোগজীবাণু কোন এলাকায় সম্পূর্ণ নতুন ও শক্তিশালী । যেমন- বাংলাদেশের জন্য 'Septoria nodorum' (গমের ব্লচ রোগ), সিনকাইট্রিয়াম এন্ডাবোয়োটিকাম (আলুর ওয়ার্ট রোগ)।

শ্রেণি খ: যে রোগজীবাণু নতুন নয় কিন্তু অধিকতর শক্তিশালী যেমন: ফাইটোপথেরা ইনফেসটানস (আলুর মড়ক রোগ)।

শ্রেনী গঃ যে রোগ জীবাণু সব সময় কিছু না কিছু রোগ ছড়ায় তবে মারাত্নক নয়। বাইপালোরিস অরাইজি (ধানের বাদামি দাগ রোগ)।

চাষাবাদ পদ্ধতি (Cultural practices)

চাষাবাদ পদ্ধতির মাধ্যমেও ফসলের রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন ভাল এবং সুস্থবীজ বাছাই করে বপন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে জমি তৈরি, ভালোভাবে জমি চাষ দেয়া, সুষম সার ব্যবহার, শস্য পর্যায় বা জমি পতিত রেখে, আগাছা দমন করে, পরিষ্কার সেচের পানি ব্যবহার, পরিপক্ক ফসল কাটা, ফসলের আবর্জনা পরিষ্কার, ফসল সঠিকভাবে শুকানো ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করে রোগ-জীবানু এড়িয়ে চলা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে সুস্থ বীজ বপন করলে বীজ বাহিত রোগের তীব্রতা কমে । জমিতে পটাশ সারের অভাব হলে ধানের কাণ্ড পঁচা রোগ যেমন বেশি হয়, তেমনি নাইট্রোজেনের আধিক্যে ধানের ব্লাস্ট ও ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট রোগ বেশি হয় ।

আগাছা অনেক রোগজীবাণুকে আশ্রয় দেয়। যেমন- বন্য বেগুন গাছ কেটে ফেললে আলুর মড়ক রোগ এড়ানো যায় । শস্য পর্যায় অবলম্বন করে বায়ু বাহিত রোগ লিফ রাষ্ট, পাউডারি মিলডিউ, অলটারনারিয়া রাইটের তীব্রতা কমানো যায় । জমি পতিত রেখে কৃমি জনিত শেকড়-গিট, গোড়াপচা ও মুল পঁচা রোগ দমন করা যায় ।

উচ্ছেদ (Eradication )

ও প্রধান পাষক বা বিকল্প পোষক ধ্বংসের মাধ্যমে রোগ দমন করা যায় ।

জৈবিক দমন (Biological Control)

উদ্ভিদ রোগ জীবাণুকে জীবিয় এজেন্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রণকে জৈবিক দমন বলে। এ সমস্ত এজেন্টকে এন্টাগনিষ্ট বলে । ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি কৃত্রিম এন্টাগনিস্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এন্টাগনিস্ট-এর বৈশিষ্ট্য হলো এরা উদ্ভিদের রোগ উৎপাদন করে না ।

মাটিতে বা পত্রপৃষ্ঠে রোগজীবাণু ও এন্টাগনিষ্ট একত্রে বাস করে । এ দুয়ের মধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষিত হয় । ভারসাম্য বজায় থাকলে ফসলে রোগ হয় না বা তীব্রতা কম থাকে । কিন্তু ভারসাম্য ক্ষুন্ন হলে

অর্থাৎ এন্টাগনিস্ট যদি শক্তি হারিয়ে ফেলে তাহলে ফসলের রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় । এমনকি মহামারী দেখা দিতে পারে। এন্টাগনিস্ট-এর শক্তি বৃদ্ধি করে এ ভারসাম্য পুনরায় স্থাপন করা যায় ।

বিভিন্ন পদ্ধতিতে এটা করা যায় । যেমন-

১। হাইপার প্যারাসিটিজম: এখানে এন্টাপনিষ্ট রোগজীবাণুর রোগ সৃষ্টি করে ।

২। আরোপিত প্রতিরোধঃ রোগ সৃষ্টির ক্ষমতাশীল ভাইরাস স্ট্রেন অনুপ্রবেশের দ্বারা উদ্ভিদের প্রতিরোধ সৃষ্টি করলে পরবর্তীতে অধিকতর শক্তিশালী ভাইরাস ঐ গাছের রোগ সৃষ্টি করতে পারে না । রোগ জীবাণু দমনের এ কৌশলকে Cross Protection বলে।

৩। ব্যাকটেরিয়া ও ফাজ প্রয়োগ: ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী ভাইরাস প্রয়াগের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস।

৪। ফাঁদ শস্য: কিছু শস্যের সংস্পর্শে আসলে কৃমি খাদ্যাভাবে মারা যায় । তিতা বেগুন জমিতে লাগালে কৃমির সংখ্যা কমে যায়।

৫। বৈরীভাবাপন্ন গাছ: এসপারাগাস ও মেরিগোল্ড প্রভৃতি গাছের মূল থেকে বিষাক্ত পদার্থ (পটাশিয়াম সায়ানাইড) বের হয় বলে সংবেদনশীল শস্যের সাথে এদের মিশ্র ফসল চাষ করলে কৃমির সংখ্যা কমে যায় ।

৬। মিশ্র ফসল: পোষক ও অপোষক শস্য মিশ্র ফসল হিসাবে চাষ করলে অপোষক গাছ রোগজীবাণুর সহায়ক নয় বলে পোষাকের রোগের তীব্রতা কমে যায় ।

৭। বীজবাহিত রোগ: এন্টাগনিস্ট ব্যাকটেরিয়া পাউডার বীজের সাথে মিশ্রিত করে বীজ বপন করলে বীজের পচন । চারার বরাইট ইত্যাদি রোগ কমে যায় ।

৮। মাটির জৈব সংশোধন: সবুজ সার, করাতের গুঁড়া, হাড়ের গুঁড়া, সরিষার খৈল, ছাই ইত্যাদির দ্বারা মাটি পরিশোধন করলে মাটিতে উপকারী অণুজীবের সংখ্যা ও শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে ফসলের রোগের তীব্রতা কমে যায় ।

পোকা দমনের মত উদ্ভিদ রোগের জৈবিক দমন এখনও কার্যকরীভাবে ব্যবসায়িকভিত্তিতে ব্যবহৃত হচ্ছে না। কিন্তু ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া Antagonist হিসাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে । যেমন Trichoderma harzianum নামক ছত্রাক ।

উদ্ভিদ নির্যাস দ্বারা রোগ দমন (Plant extract )

উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করে উদ্ভিদের রোগ দমন একটি আধুনিক প্রযুক্তি । সাম্প্রতিক কালে বাংলাদশেও উদ্ভিদ রোগ দমনে উদ্ভিদ নির্যাস সফলতার সাথে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- রসুনের রস (পানি: রসুন - ১:১) কিংবা মান্ডার পাতার রস (পানি ও পাতা = ১৪১ ) দ্বারা বীজ শাধেন করলে চড়সড়ংরং বিহীহধং অনেক বীজবাহিত ছত্রাককে দমন করা যায়।

রোগ প্রতিরোধীজাত ব্যবহার (use of disease Resistant variety)

রোগ প্রতিরোধী বলতে পোষাকের দ্বারা পরজীবীর আক্রমণ প্রতিহত করার মতোক বুঝায়। পোষাকের এই ক্ষমতা নিজস্ব বংশ পরম্পরায় স্থায়ী। এটা জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা প্রকট (dominant) ও রোগ সংবেদনশীল প্রচ্ছন্ন বিশিষ্ট্য। প্রকট জিন যে জাতে থাকে সে জাত রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা সম্পন্ন । বিভিন্ন পদ্ধতিতে (নির্বাচন, সংকরায়ন, টিস্যু কালচার, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি) এ প্রকট “জিন” সংবেদনশীল জাতে স্থানান্তর করা যায়। রোগপ্রতিরোধ জাত ব্যবহারই হচ্ছে উদ্ভিদ রোগ দমনে উত্তম ও আধুনিক পন্থা

রাসায়নিক দমন (Chemical Control):

উদ্ভিদ রোগ সৃষ্টির পূর্বে বা পরে রোগনাশক প্রয়োগে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে রোগনাশককে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায় যথা-

১) প্রতিরক্ষামূলক রোগনাশক 

২) নিরাময়কারী রোগনাশক এবং অ্যান্টিবায়োটিক

প্রতিরক্ষামূলক (Preventive) রোগনাশক

এগুলো প্রতিরোধের লক্ষে রোগাক্রমণের পূর্বে বা শুরুতে প্রয়োগ করা হয় । প্রতিরক্ষামূলক রোগনাশক অজৈব ও জৈব রাসায়নিক প্রকৃতির হতে পারে । রোগ দমনের ঔষধগুলোকে মোটামুটি পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা- তাম্র ঘটিত রাগ নাশক, গন্ধক ঘটিত রোগনাশক, জৈবরোগনাশক (ঔষধ), পারদ ঘটিত রোগ নাশক এবং ধুম্র উৎপাদক মাটি পরিশাধেক। অধিকাংশ ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগ ঔষধ প্রয়োগে দমন করা যায় । ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ ঔষধ ব্যবহারে তেমন ফল লাভ হয় না বরং বীজ পরিশোধন দ্বারা রোগ বিস্তার রোধ করা হয় । ভাইরাস রোগ আক্রান্ত গাছকে সুস্থ করার কোন ঔষধ নেই, কেবলমাত্র আক্রান্ত গাছে কীটনাশক ছিটিয়ে জাবপোকা, হপার প্রভৃতির বিস্তৃতি রোধ করা যায়। ভাইরাস হতে পরিত্রাণের লক্ষে সুস্থ গাছ হতে বীজ নেয়ার ব্যবস্থা করা হয় । নেমাটোড জনিত রোগ ও অন্যান্য কোন কোন রোগের বেলায় মাটি পরিশোধন করতে হয় ।

সাধারণত আক্রান্ত গাছ কিংবা অজাকে রক্ষা করা ও রোগকে সরাসরি দমন করার উদ্দেশে তাম্র ঘটিত, গন্ধকঘটিত ও জৈব ঔষধ ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়। পারদ ঘটিত ঔষধ গুঁড়ার আকারে ডাস্টিং এর কাজে ব্যবহার করা হয় বীজ শাধেনের জন্য । ফিউমিগ্যান্ট বা ধুম্র উৎপাদক ঔষধ ব্যবহৃত হয় মাটি শোধনের জন্য । বোর্দোমিকচার সহ কয়েকটি ঔষধ নিজেরাই তৈরি করে নেয়া যায়। যে সব স্থানে বোর্দোমিকচারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে । সেখানে বোর্দো মিকচারের স্থানে অন্যান্ন তাম্র ঘটিত ঔষধ যেমন কপার অক্সিক্লোরাইড, কপার-এ- কম্পাউন্ড, কুপ্রাভিট ও পেরেনকসের যে কোনটি প্রযোজ্য ।

উপরে বর্ণিত রোগনাশকগুলো গাছ বিশোষণ করে না এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কিছুটা করলেও তা সর্বাঙ্গে ছড়ায় না । সাধারনত এগুলো স্থানীয় ভিত্তিতে কাজ করে । এগুলো গাছের রোগের আক্রমণ কমায় তাতে কোন সন্দেহ নেই । কিন্তু আক্রান্ত গাছকে রোগমুক্ত করে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে না কিছু কিছু রোগ-নাশক আছে যা গাছে বিশোষিত হয়ে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং গাছের দেহের মধ্যে জীবাণু থাকলে অথবা প্রবেশ করতে চেষ্টা করলে তাকে ধ্বংস করে এবং রোগ নিরাময় করে গাছকে সুস্থ করে । নিরাময়কারী রোগনাশক সিস্টেমিক বা সর্বাঙ্গবাহী, অক্সামিন, পিরাসিডিন ও বেঞ্জি মিডাজেল শ্রেনীর, সিস্টেমিক প্রকৃতির অক্সামিন, ভিটাভেক্স ও পরান্ট ভ্যাক্স । পিরামিডিন-মিলকার্ব, মিলটেক্স বেঞ্জি মিডোজল- বেনোমিল-এবং ব্যাভিস্টিন অ্যান্টিবায়াটিক রোগনাশক এটি অণুজীব থেকে উৎপন্ন এক প্রকার দ্রব্য যা অন্যান্য অনুজীবের ক্ষতি কারক। সিস্টেমিক রোগনাশকের ন্যায় এটিও সর্বাঙ্গীয় প্রকৃতির। স্ট্রেপটোমাইসিন, এগ্রিমাইসিন এক্টিডাওন, ব্লাস্টিসিডিন, কাসুমিন বিশেষ উল্লেখ্যযোগ্য অ্যান্টিবায়োটিক রোগনাশক।

সমন্বিত রোগ দমন (Integrated Pest Management IPM)

উদ্ভিদের সবগুলো রোগ দমন পদ্ধতি সমানভাবে কার্যকরী নয় এবং রাসায়নিক পদ্ধতি তাৎক্ষণিক কার্যকর হলেও রোগনাশক পরিবেশ দুষন করে। রোগ প্রতিরোধীজাত উন্নয়ন সময় সাপেক্ষ ও অন্যান্য পদ্ধতি ব্যয় বহুল ।

প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষিত না করে উদ্ভিদ রোগ দমনের সকল কার্যকর উত্তম পদ্ধতিগুলোর সমন্বয় সাধন করে রোগ দমনের যে পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা তাই সমন্বিত রোগ দমন। সুস্থ সবল রোগ জীবাণুমুক্ত বীজ ব্যবহার, পরিচ্ছন্নভাবে জমি তৈরি, আগাছা দমন, সুষম সার প্রয়োগ, রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার, মাঠে রোগ দমনে কার্যকর রোগনাশকের ন্যূনতম ব্যবহার ও উপযুক্ত সময় ফসল উত্তোলন ইত্যাদি ওচগ পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য দিক ।

রোগনাশকের নাম ও প্রয়োগ মাত্রা

বাংলাদেশে ব্যবহার জন্য অনুমোদিত ও রেজিস্ট্রিকৃত কিছু রোগনাশকের নাম ও প্রয়োগে মাত্রা নিম্নের সারণিতে দেওয়া হলো-

সারণি-১

রোগের নাম, ফসলের নাম ও রোগনাশকের নামসহ প্রয়োগ মাত্রা

Content added || updated By

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১ । ফল গাছের রোগ ব্যধিসমূহকে কত ভাগে ভাগ করা যায় ? 

২। রোগ দমন কর্মসূচির মূলনীতি কয়টি ? 

৩। কৃষি ক্ষেত্রে শক্তিশালী রোগজীবাণুর আবির্ভাব কিভাবে ঘটে ? 

৪ । কীভাবে রোগজীবাণু অধিকতর শক্তি সঞ্চয় করে থাকে ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। কলার প্রধান প্রধান রোগগুলোর নাম লেখ । 

২। আমের বৃত্ত পচা রোগ কোথায় দেখা যায় এবং কিভাবে আক্রমণ করে লেখ । 

৩ । বোর্দো পেষ্ট তৈরির উপাদানের নাম ও অনুপাত লেখ । 

৪ । বোর্দো মিকচার কোন কোন রোগে ব্যবহৃত হয় ব্যাখ্যা কর । 

৫ । কুলের পাউডারী মিলডিউ রোগের লক্ষণসমূহ ব্যাখ্যা কর । 

৬। ফল ও ফল গাছে রোগ সৃষ্টির কারণগুলো কি কি । 

৭ । আই পি এম বলতে কী বোঝায় লেখ । 

৮। এন্টাগনিস্ট বলতে কী বোঝায় লিখ ।

রচনামূলক প্রশ্ন

১ । ফলের প্রধান প্রধান ১০টি রোগের নাম, ফসলের নাম ও রোগের কারন লিপিবদ্ধ কর । 

২। পেয়ারার ফোসকা ও উইলট রোগ দমনের উপায় লেখ । 

৩ । সমন্বিত রোগ দমন বলতে কী বাঝায় আলোচনা কর । 

৪ । কলার পানামা রোগ, পেয়ারার ক্যাংকার ও কুলের পাউডারি মিলডিউ রোগ দমন সম্পর্কে লেখ । 

৫ । বোর্দো মিকচারের প্রস্তুত প্রণালি বর্ণনা কর ।

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion